তালের কেক ও পুডিং সহ অসাধারণ ও মজাদার সব তালের রেসিপি। না খেলে সম্পূর্ণ মিস করবেন।।

তালের রেসিপি


আসসালামু আলাইকুম,

বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। 

বন্ধুরা, তাল অনেকেই খুব পছন্দ করেন। বর্ষা কালে কাঁচা তালের শাঁস খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।  তবে কাঁচা তালের শাঁস খেলেও ভাদ্র মাসে পাকা তালের প্রতি আকর্ষণ নেই এমন মানুষ খুবই কম আছে। অনেকেই আছেন যারা একটু বয়সী তারা তালের সময়টায় প্রায় প্রতিদিনই তাল-দুধ বা তাল-নারকেল দিয়ে ভাত খেতে খুবই পছন্দ করেন। এটা খেতে খুবই মজার। শুধু বয়সীরা কেন সব বয়সীরাই এটা খেতে পছন্দ করেন। আর যদি কেউ এটা কখনো না খেয়ে থাকেন তাহলে খেয়ে দেখবেন খুবই মজাদার।

তো বন্ধুরা এবার আমি মূল আলোচনায় যাই। যারা তাল প্রেমী তারা নিশ্চই তালের এই সময়টাতে তাল দিয়ে ভাত খাবার পাশাপাশি তালের তৈরি নানান পদের খাবার তৈরি করেন। আজ আমি আপনাদের কাছে তালের তৈরি অসাধারণ ও মজাদার কিছু রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি।

তাহলে চলুন বন্ধুরা শুরু করা যাকঃ

🔵 তালের কেকঃ

🟣 উপকরণঃ

পানি ঝরানো ঘন তালের গোলা - ৩ কাপ, 

ময়দা - ১ কাপ, 

চালের গুঁড়া - ১ কাপ, 

ডিম - ৪টি, 

গুঁড়া দুধ - ১ কাপ, 

ঘি - আধা কাপ, 

তেল - আধা কাপ, 

চিনি - ৩ কাপ, 

🟣 প্রস্তুত প্রনালীঃ

👉 তালের গোলা, ময়দা ও চালের গুঁড়া একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে একটা গরম জায়গায় ৩-৪ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন।

👉 ৩-৪ ঘণ্টা পর এটা ফুলে দ্বিগুণ হয়ে যাবে, তখন ভালো করে মেখে নিন।

👉 ডিম ও চিনি একসাথে বিট করুন। চিনি গলে গেলে তালের মিশ্রণ, ঘি ও তেল দিয়ে আবারও ভালোভাবে মিশ্রণটি মেশান।

👉 কেক তৈরির পাত্রে তেল ব্রাশ করে নিন। এবার এতে মিশ্রণটি ঢেলে দিন।

👉 আপনি এবার ওভেন বা চুলায় কেকটি তৈরি করতে পারেন। ১ ঘন্টা পর একটি কাঠি দিয়ে দেখে নিন আপনার কেক তৈরি হয়েছে কিনা।

👉 কেক তৈরি হয়ে গেলে এবার কেকটি ঠাণ্ডা হলে ছোট ছোট স্লাইস করে কেটে পরিবেশ করুন। দেখুন এটা খেতে কতটা মজার হয়।

🔵 তালের পুডিংঃ

🟣 উপকরণঃ

তালের গোলা- আধা কাপ

ডিম- ৪টি

তরল দুধ- ১ কাপ

গুঁড়া দুধ- ১/৩ কাপ

নারকেল কোঁড়ানো - ১ টেবিল চামচ। ( সামান্য ভেজে নিবেন, তাহলে সুন্দর একটা ফ্লেভার আসবে).

লবণ- ১ চিমটি

কনডেন্সড মিল্ক - ১/৩ কাপ বা 

চিনি - ২ কাপ ( আপনি কনডেন্সড মিল্ক এর পরিবর্তে চিনি দিতে পারেন)।

ক্যারামেল তৈরির উপকরণঃ

চিনি- ৩ টেবিল চামচ

পানি- ১ টেবিল চামচ  

🟣 প্রস্তুত প্রণালিঃ

👉 প্রথমে ক্যারামেল তৈরি করে নিন। প্যানে চিনি ও পানি  দিয়ে নাড়তে থাকুন। একসময় হালকা বাদামি রং হয়ে আসলে নামিয়ে পুডিং বসানোর পাত্রে ক্যারামেলটা দিয়ে দিন। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন ক্যারামেলটা যেন খুব বেশি কড়া না হয়। তাতে কিন্তু এটা তিতা হয়ে যাবে।

👉 এবার ডিমগুলো ভালো করে বিট করে কনডেন্সড মিল্ক/চিনি ও তালের গোলা ভালো করে মিশিয়ে নিন। গরুর দুধ ও লবণ দিয়ে আবারও বিট করে নিন ভালোভাবে। 

👉 এবার ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে মিশ্রণটি মোল্ডে নিন, যাতে কোনো দলা বা তাল-ডিমের কোনো আঁশ না থাকে। ফয়েল পেপার বা কোনো টাইট ঢাকনা দিয়ে পাত্রের মুখ ভালোকরে আটকে নিন।

👉 এবার একটি প্যানে পানি নিন। পানির ভেতর স্টিলের স্ট্যান্ড বসিয়ে নিন, আর পানি ফুটে উঠলে পুডিংয়ের পাত্রটি বসিয়ে দিন স্ট্যান্ডের উপর। 

👉 এবার ওই প্যানেও ঢাকনা দিয়ে দিন। ঢাকনায় যদি ছিদ্র থাকে তাহলে সেটা বন্ধ করে দিন।  আধা ঘণ্টা পর এসে ফয়েল পেপার খুলে দেখুন আপনার পুডিং হয়েছে কিনা। এটা আপনি কোনো কাঠি দিয়ে দেখতে পারেন। 

👉 পুডিং হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন এবং ঠান্ডা হয়ে গেলে ১-২ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে পরিবেশন করুন মজাদার তালের পুডিং।

🔵 তালের পায়েসঃ

🟣 উপকরণঃ

তালের ঘন গোলা - ২ কাপ,  

পোলাউ/আতপ চালের সুজি - আধা কাপ,

নারিকেল কোড়ানো - ১ কাপ, 

দুধ - ২ লিটার,

চিনি - ২ কাপ, 

এলাচ - ৩-৪ টি, 

দারুচিনি - ২-৩ টুকরা, 

কিশমিশ - ২ চা চামচ, 

পেস্তাবাদাম কুচি - ২ চা চামচ।

🟣 প্রস্তুত প্রণালিঃ

👉 দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। প্রায় অর্ধেক পরিমাণ হয়ে এলে সুজি, নারিকেল, এলাচ ও দারুচিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। এই সময়ে নাড়ানো থামাবেন না, তাহলে সুজি নিচে লেগে যেতে পারে এবং জমাট বেঁধে যেতে পারে।

👉 এবার সুজি সিদ্ধ হয়ে ঘন হলে তার ভিতর তাল ও চিনি দিয়ে আরো কিছুক্ষণ অনবরত নাড়তে থাকুন।

👉 চিনিটা পুরোপুরি গলে গিয়ে আরো কিছুটা ঘন হলে কিশমিশ ও পেস্তাবাদাম কুচি দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে ফেলুন।

👉 ঠাণ্ডা হলে পছন্দমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

🔵 তালের চুঁই পিঠাঃ

🟣 উপকরণঃ

ঘন তালের গোলা - ৪ কাপ, 

মজানো পাঁকা কলা - ১০-১২ টি

গুড় / চিনি - পরিমাণমত

নারকেল কোরানো - ২-৩ কাপ,

আতপ চালের ভাজা/টালা গুঁড়া - বন্ধুরা, এখানে আতপ চালের ভাজা গুঁড়া আপনি তাল, কলা ও চিনি আগে মিশিয়ে এর পরিমান অনুযায়ী নিবেন যতটা লাগে।

🟣 প্রস্তুত প্রণালিঃ

👉 প্রথমে পাকা কলার খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে মথে নিয়ে এর ভিতর তাল, চিনি ও নারিকেল দিয়ে মাখাতে হবে। মিশ্রণটি ভালোভাবে মাখানো হয়ে গেলে এর ভিতরে টালা চালের গুঁড়া দিয়ে মাখান। 

👉 আমি উপরে একবার বলেছি, আবারও বলছি এখানে আতপ চালের ভাজা/টালা গুঁড়া আপনি তাল, কলা ও চিনি আগে মিশিয়ে এর পরিমান অনুযায়ী নিবেন যতটা লাগে। 

👉 মিশ্রণটা একটু শক্ত হতে হবে। কারণ এটাকে হাত দিয়ে শেইপ দিতে হবে। আপনারা এটি যেকোনো আকারে শেইপ দিতে পারেন। 

👉 আমি কিছুটা দলা নিয়ে একটি জালির উপরে হালকা ভাবে ঘষে ঘষে আঙ্গুলের মত করে শেইপ দেই, তবে এর দুই মাথা একটু চিকন এবং মাঝটা মোটা রাখি। এটা দেখতে খুবই সুন্দর হয়। আপনারা আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন করতে পারেন। 

👉 এবার এটিকে ভাপে ভালো করে সিদ্ধ করতে হবে। যেভাবে ভাপা পিঠা সিদ্ধ করতে হয়, সেইভাবেই। 

👉 সিদ্ধ হলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। আর খেয়ে দেখুন এটা খেতে কতটা মজাদার। 

🔵 তালের বড়াঃ

🟣 উপকরণঃ

ঘন তালের গোলা - ২ কাপ, 

আতপ চালের গুঁড়া / ময়দা - ২ কাপ, 

গুঁড়া দুধ - আধা কাপ, 

নারকেল কোরানো - ১ কাপ, 

গুড় / চিনি - ২ কাপ, 

ঘি - ২ টেবিল চামচ, 

তেল (ভাজার জন্য) - পরিমাণমতো।

🟣 প্রস্তুত প্রণালিঃ

👉 তালের গোলা, ঘি ও গুড় একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

👉 চালের গুঁড়া / ময়দা ও গুঁড়া দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে এরপর এতে তালের গোলা, ঘি এবং গুড় বা চিনি দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে আধা ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। খেয়াল রাখবেন গোলা যেন বেশি পাতলা না হয়।

👉 এবার কড়াইতে তেল গরম করে নিন। এখন হাত দিয়ে কিছুটা পরিমান মিশ্রণ নিয়ে ছোট ছোট বলের মত বানিয়ে তেলের ভিতরে ছেড়ে দিন। মাঝারি আঁচে বাদামি করে বড়াগুলো ভেজে নিন। ভালো করে উল্টেপাল্টে ভাজতে হবে যেন ভেতরটা ভালো করে সিদ্ধ হয়।

👉 তালের বড়া গরম বা ঠাণ্ডা যেকোনো অবস্থায়ই খাওয়া যায়। তবে গরম গরম খেতেই বেশি ভালো লাগে।

🔵 তালের হালুয়াঃ

🟣 উপকরণঃ

তালের গোলা - ৩ কাপ, 

তরল দুধ - ২ কাপ, 

গুঁড়া দুধ - ১ কাপ, 

ঘি - আধা কাপ, 

এলাচ গুঁড়া - ১ চা চামচ, 

চিনি - ২ কাপ/পরিমাণমতো  

কিসমিস - পরিমাণমতো, 

পেস্তা বাদাম কুচি - ২ চা চামচ। 

🟣 প্রস্তুত প্রণালীঃ

👉 তালের গোলা, তরল দুধ, গুঁড়া দুধ, চিনি, এলাচ গুঁড়া সব একসঙ্গে মেখে নিন। 

👉 এবার প্যানে ঘি দিয়ে মিশ্রণটি ঢেলে দিন। ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। যখন আঠালো ভাব আসবে তখন গোলাপজল, কিসমিস ও পেস্তা বাদাম কুচি দিয়ে দিন। 

👉 শক্ত হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার তালের হালুয়া।

🔵 তালের পাটিসাপটাঃ

🟣 উপকরণঃ

তালের গোলা - ২ কাপ, 

চালের গুঁড়া - ২ কাপ, 

চিনি / গুড় - ৩ কাপ, 

তরল দুধ - ১ লিটার

এলাচ গুঁড়া - ১ চিমটি,

লবণ - পরিমাণমতো। 

🟣 পুর তৈরির জন্যঃ

নারিকেল কোড়ানো - ২ কাপ, 

দুধের ক্ষীর - ১ কাপ, 

চিনি - ১ কাপ। 

🟣 প্রস্তুত প্রণালীঃ

👉 প্রথমে নারিকেল কোড়ানো, দুধের ক্ষীর ও চিনি কড়াইয়ে জ্বাল দিয়ে পুর তৈরি করে নিতে হবে।

👉 এবার তালের গোলার সাথে বাকি সব উপকরণ মিলিয়ে পাতলা মিশ্রণ তৈরি করে নিন। 

👉 এবার তাওয়াতে বা ফ্রাই প্যানে সামান্য ঘি বা তেল ব্রাশ করে চামচে গোলা নিয়ে প্যানে দিয়ে তাওয়া/প্যান ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাতলা রুটির মত তৈরি করতে হবে। 

👉 ওপরটা একটু শুকিয়ে এলে এর ভিতর আগে থেকে তৈরি করে রাখা নারিকেলের পুর দিয়ে পাটির মতো রোল করে পাটিসাপটা পিঠা তৈরি করতে হবে।

👉 এভাবে একে একে সব পিঠা বানানো হয়ে গেলে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

🔵 তালের রস লুচিঃ

🟣 উপকরণঃ

তালের ঘন গোলা - ১ কাপ, 

ময়দা - ২ কাপ, 

চিনি - ২ কাপ, 

গুঁড়া দুধ - ২ টেবিল চামচ, 

গুঁড়া করা চিনি - ২ টেবিল চামচ, 

ঘি - ৪ টেবিল চামচ, 

লবণ - ১ চিমটি, 

তেল (ভাজার জন্য) - পরিমাণমতো। 

🟣 প্রস্তুত প্রণালীঃ

 👉 প্রথমে চুলায় ২ কাপ পানির সাথে চিনি দিয়ে জ্বাল দিয়ে সিরা বানিয়ে নিন।

👉 বড় বোলে ময়দা ও গুঁড়া দুধ চেলে নিন। এর সঙ্গে লবণ ও মিহি চিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। ঘি দিয়ে ভালো করে ঝুরঝুরে করে নিন।

👉 এবার ময়দার মিশ্রণে অল্প অল্প করে তালের গোলা দিয়ে ময়ান দিতে থাকুন। এভাবে যখন রুটির খামির মতো হবে তখন আর তালের গোলা দিবেন না। ভালো করে মথে ১৫-২০ মিনিট ঢেকে রাখুন।

👉 এবার অল্প করে খামি নিয়ে লুচির মত বেলে ডুবো তেলে ভাজুন। 

👉সব লুচি ভাজা হয়ে গেলে একটি পাত্রে রেখে এর ওপর থেকে গরম চিনির সিরা চারদিকে ভালো করে ছড়িয়ে দিন। ঠাণ্ডা হলে পছন্দমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

বন্ধরা, এই রেসিপিগুলো একবার হলেও তৈরি করে খেয়ে দেখুন এবং পরিবারের সবাইকে খাওয়ান আর দেখুন  এগুলো খেতে কতটা মজাদার ও সুস্বাদু হয়। একবার বানিয়ে খেলে এরপর থেকে এগুলো বারবার তৈরি করে খেতে ইচ্ছে করবে।

তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্ত। সবাইকে পোস্টটি সময় নিয়ে পড়ার জন‌্য ধন‌্যবাদ।

আগামীতে আবার কোনো সুন্দর ও অসাধারণ রেসিপি নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো, সুস্থ ও সুন্দর থাকবেন। আর আমার Juifull Bangla সাইটটি সর্বদা ভিজিট করুন আর নতুন নতুন আপডেট পান।

আল্লাহ হাফেজ। 

Post a Comment

0 Comments