বিলুপ্তপ্রায় কটকটি ও বাদাম বাহার এর অসাধারণ ও মজাদার রেসিপি। একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।।

 

রেসিপি

আসসালামু আলাইকুম, 

বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। 

বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের মাঝে খুবই প্রিয় ও মজাদার ২ টি শেয়ার করতে চলেছি, যা খেতে বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাই-ই প্রচন্ড পছন্দ করেন। রেসেপি ২ টির নাম হলো কটকটি / দিলবাহার তৈরির রেসিপি এবং বাদাম বাহার / বাদাম কটকটি তৈরির রেসিপি। 

বাঙালিরা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে খুবই ভালোবাসে। আর আপনি খুব সহজে ঘরে বসে নিজেই মাত্র ২-৩ টি উপকরণ দিয়ে এই খাবার ২ টি একদম দোকানের মতো করে বানাতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে বাড়তি কোনো উপকরণ কিনতে হবে না। আপনার ঘরে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়েই আপনি এগুলো তৈরি করতে পারবেন। 

এবার আসুন কথা না বাড়িয়ে আজ আমরা জেনে নিই, কিভাবে ঘরে বসে খুব সহজেই কটকটি এবং বাদাম বাহার / বাদাম কটকটি তৈরি করা যায়। 

তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নিই রেসিপি ২ টি তৈরির প্রনালী জেনে নেই - 

🔵 কটকটি / দিলবাহার তৈরির নিয়মঃ

কটকটি রেসিপি

বন্ধুরা, আমার ছেলেবেলা ও কৈশোর গ্রামের নিবিড় ছায়াতলে বেড়ে ওঠে। আর আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন প্রায় প্রতিদিন হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে বিভিন্ন লোকেরা সেইগুলো বিক্রি করতে আসত। এরা কোন এলাকায় কি নামে পরিচিত আমি জানিনা তবে আমরা এদেরকে ফেরিওয়ালা হিসেবে চিনি। আর আমার ছোটো বেলায় এমন কোনো ফেরিওয়ালা ছিলোনা, যাদের কাছে কটকটি ছিলনা। এই কটকটিকে আমরা দিলবাহারও বলতাম। আমাদের বাড়ি আর আমার নানা বাড়ি ২ জায়গায়ই এই ফেরিওয়ালা বা কটকটিওয়ালাদের আবির্ভাব ছিল। তাই আমার ছোট বেলায় এগুলো আমি প্রচুর পরিমানে খেয়েছি এবং এটা এখনো আমার পছন্দের একটি খাবার।

এ সময় আমাদের মা-চাচি-নানি-খালারা পুরানো কাপড়চোপড় বা বিভিন্ন ভাঙা জিনিসের বিনিময়ে ফেরিওয়ালা বা কটকটিওয়ালার কাছ থেকে আমাদের  কটকটি কিনে দিতেন। তাছাড়াও পুরোনো বা ব্যাবহার অযোগ্য হাঁড়ি পাতিল তাদেরকে দিয়েও এই কটকটি কিনতেন। তবে নব্বইয়ের পরে এই ফেরিওয়ালা বা কটকটিওয়ালাদের আবির্ভাব কমতে থাকে। আর এখন মাঝে মাঝে ফেরিওয়ালাদের দেখা গেলেও তাদের কাছে এখন আর কটকটি বা দিলবাহার পাওয়া যায় না।

বন্ধুরা, কটকটি এখন আর পাওয়া না গেলেও প্রাচীন এই স্বাদ হয়ত কেউই ভুলে যাননি। তাই আমি আজ আপনাদের এই কটকটি কিভাবে আপনি পারফেক্ট ভাবে ঘরে বসে ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে তৈরি করবেন সেটা আপনাদের সবাইকে শেয়ার করব।

তো চলুন বন্ধুরা, প্রথমে উপকরণ গুলো দেখে নেইঃ

👉 উপকরণ:

চিনি - ২ কাপ। 

পানি - ৩ টেবিল-চামচ। 

বেকিং সোডা - ১ চা-চামচ। (বেকিং পাউডার না)

মধু - আধা কাপ। (না দিলেও হবে) 

👉 প্রস্তুত প্রনালী: 

সর্ব প্রথমে কোনো প্যান বা প্লেটে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা বাটার পেপার অথবা তেল ব্রাশ করে রাখুন।

এবার ফ্রাই প্যানে বা কড়াইতে চিনি ও মধু দিয়ে এর ভিতর পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। চিনি আস্তে আস্তে গলতে শুরু করলে ভালো করে নাড়তে থাকুন। যখন ক্যারামেলাইজড হবে তখন চুলার আঁচ একদম কমিয়ে রাখুন। চিনির রং গাঢ় হয়ে আসলে অল্প ক্যারামেল নিয়ে ঠান্ডা পানিতে দিয়ে দেখুন। যদি দেখেন যে দলা বেঁধে যায় তাহলে বুঝবেন আপনার ক্যারামেল তৈরি হয়ে গেছে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন ক্যারামেলটা যেন খুব বেশি কড়া না হয়। তাতে কিন্তু কটকটি তিতা হয়ে যাবে। যেমনটা আামার প্রথম বার তৈরি করতে গিয়ে  হয়েছিল, সবই ঠিকঠাক ছিল কিন্তু একটু তিতা লাগছিলো।😀😀😀

ক্যারামেল হলে চুলা থেকে নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেইকিং সোডা খুব ভালো করে মিশিয়ে দিন, কোথাও যেন দলা পাকিয়ে না যায়, সেটা খেয়াল রাখবেন। 

বন্ধুরা এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন এসময় চিনির এই মিশ্রণটা শক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই এই কাজটি আপনাকে খুব দ্রুত করতে হবে। এবার প্লেটে ঢেলে দিন। গরম থাকা অবস্থায় এটি কখনোই হাতে দিয়ে ধরতে যাবেন না, তাহলে কিন্তু হাত পুড়ে যাবে। ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে কটকটি শক্ত হয়ে যাবে। তখন ভেঙে নিন। যেভাবে আপনার ইচ্ছা। তবে আমি একটু উপরে তুলে নিচে থাকা প্লেটের উপর ফেলে ভাঙতে খিব মজা পাই। আপনারা চাইলে সেটা করতে পারেন,। ব্যাস কটকটি তৈরি।

আবারও মনে করিয়ে দেই কটকটিতে বেকিং সোডা-ই দিতে হবে বেকিং পাউডার দিলে হবে না ।

🔵 বাদাম বাহার / বাদাম কটকটি তৈরির নিয়মঃ

বাদাম বাহার রেসিপি

ছোট বড় সবাই ই এই বাদাম বাহার / বাদাম কটকটি খাবারটি খুবই পছন্দ করেন। আমারও এই খাবারটি খুবই পছন্দের। অবশ্য বাদামের কটকটি খেতে আসলে কোনো বয়স লাগে না, এগুলো এমন খাবার যে আজীবনই এগুলো খেতে সব বয়সী লোকেরা পছন্দ করে। দোকানের সেই মজাদার বাদামের কটকটি আপনি মাত্র কয়েকটি ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে খুবই সামান্য সময়ে বাসায়ই তৈরি করতে পারবেন।  

তাহলে চলুন দারুণ এই রেসিপি কিভাবে তৈরি করবেন সেটা জেনে নেই। 

👉 উপকরণঃ

চিনি - ১ ১/২ কাপ বা আপনার স্বাদ অনুযায়ী

পানি - সামান্য

বাদাম - ২ কাপ 

👉 প্রস্তুত প্রণালীঃ

সর্ব প্রথমে কোনো ট্রে বা প্লেটে মাখন, ঘি বা তেল ব্রাশ করে রাখুন।

এবার ফ্রাই প্যান বা কড়াইতে চিনি ও সামান্য পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। চিনি চামচ দিয়ে নাড়তে থাকুন যাতে লেগে না যায়। সব চিনি গলে যখন ক্যারামেলাইজড হবে তখন বাদামগুলো দিয়ে দিন। (বাদাম দেয়ার আগে চিনির রং যখন গাঢ় হয়ে আসবে তখন অল্প ক্যারামেল নিয়ে ঠান্ডা পানিতে দিয়ে দেখুন। যদি দেখেন যে দলা বেঁধে যায় তাহলে বুঝবেন আপনার ক্যারামেল তৈরি হয়ে গেছে।) 

চামচ দিয়ে বাদামগুলো ভালো করে নেড়ে মিশিয়ে নিন। এবার মাখন বা তেল দেয়া ট্রে বা প্লেটে বাদামের মিশ্রণ ঢেলে ঢেলে ঘি মাখানো চামচ দিয়ে সমান করে দিন। গরম থাকতে থাকতেই ছুরি দিয়ে আপনার পছন্দ মত আকারে কেটে ফেলুন। এরপর ঠান্ডা হতে দিন। 

ব্যস তৈরি হয়ে গেল আপনার বাদামের কটকটি বা বাদম বাহার। এবার এটাকে এয়ার টাইট বক্সে ভরে বেশ কিছু দিন সংরক্ষণ করতে পারবেন ফ্রিজ ছাড়াই।

বন্ধরা, এই রেসিপি ২ টি একবার হলে তৈরি করে খেয়ে দেখুন এবং পরিবারের সবাইকে খাওয়ান আর দেখুন  এগুলো খেতে কতটা পারফেক্ট, মজাদার ও সুস্বাদু হয়। এরপর থেকে এগুলো বারবার তৈরি করে খেতে ইচ্ছে করবে।

তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্ত। সবাইকে পোস্টটি সময় নিয়ে পড়ার জন‌্য ধন‌্যবাদ।

আগামীতে আবার কোনো সুন্দর ও অসাধারণ রেসিপি নিয়ে হাজির হব। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো, সুস্থ ও সুন্দর থাকবেন। আর আমার Juifull Bangla সাইটটি সর্বদা ভিজিট করুন আর নতুন নতুন আপডেট পান।

আল্লাহ হাফেজ। 

Post a Comment

0 Comments