ত্বক সুন্দর ও লাবণ‌্যময় করে তুলতে বিভিন্ন ফলের কার্যকারীতা, যা আপনার অজানা।

                              ত্বকের যত্ন

আসসালামু আলাইকুম

বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহ্ রহমতে সবাই ভালো আছেন।

বন্ধুরা, ত্বক সুস্থ, সুন্দর, ও লাবণ‌্যময় রাখতে ফলমূল কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আজ আপনাদের কাছে শেয়ার করব। এগুলো হয়তো অনেকেরই অজানা।

বন্ধুরা, ঠিকঠাক আপনার ত্বকের যত্ন নিতে পারলে আপনার ত্বক থাকবে সজীব ও সতেজ। আজ আমি আপনাদের ১৫টি এমন উপকারী ফলের কথা বলব যা খেলে শুধুমাত্র আপনার স্বাস্থ‌্যই ভালো থাকবেনা, আপনার ত্বকও হয়ে উঠবে সুন্দর ও উজ্জ্বল। আর এগুলো আপনার বয়সের ছাপও অনেকটা কমিয়ে দেবে।

তো বন্ধুরা কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেই কোন ফল কিভাবে আপনার ত্বকের স্বাস্থ‌্যকে ভালো, সুন্দর, উজ্জ্বল এবংঝলমলে রাখবে।

আম:

আম সবার প্রিয় একটি ফল। আম খেতে কে না পছন্দ করে? এমন কেউ নেই যে আমের মৌসুমে আম খান না। আমে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ । এক কাপ পাকা আমে ১০০ ক্যালরি, ১ গ্রাম প্রোটিন, দৈনন্দিন প্রয়োজনের ভিটামিন ‘এ’ ৩৫%, ভিটামিন ‘বি’ ৬%। ফাইবার সমৃদ্ধ ফল বলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আম শরীরের জন‌্য খুবই উপকারী। শুধু শরীর নয়, আম ত্বকের যত্নেও খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আমে থাকা ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ আপনার ত্বক রাখবে উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত।

কমলা:

রূপচর্চায় অনেকদিন থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে কমলা এবং কমলার খোসা। ভিটামিন সি এবং বেটা ক্যারোটিনযুক্ত খাবারের একটি চমৎকার উৎস হলো কমলা। তাছাড়া এই ফলটি ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ইত্যাদি উপাদানে ভরপুর। কমলা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । তাই সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে নিয়মিত কমলা খান।

এছাড়াও বন্ধুরা,কমলার খোসাগুঁড়া করে ফেস প‌্যাক তৈরি করে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক  ফর্সাও করে। এছাড়াও ত্বকের মৃত কোষ ও ধুলাবালি দূর করতে পারে এই ফেস প‌্যাক ।

আরো পরুনঃ

পেঁপে:

নরম তুলতুলে পাকা পেঁপেকে রোগীর পথ্য বলা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সারা বছরই পেঁপের চাষ হয়। পাকা পেঁপে অনেকেই খেতে পছন্দ করেন। এই পেপের অনেক গুণাগুণ রয়েছে। পাকা পেঁপে বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব‌্যবহার করা হয়ে থাকে। পেঁপে এমনই একটি ফল যা শরীরের ওজন কমিয়ে রাখে। আর একটি মজার কথা হল এই পাকা পেপে আপনার ত্বকের বিভিন্ন সমস‌্যা দূর করতে সাহায‌্য করে। এতে প্রচুর পরিমানে জলীয় অংশ থাকায় এটি ত্বককে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। পেঁপেতে থাকা বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের মৃত কোষগুলোকে সারিয়ে ত্বকের দাগ ও বলিরেখা রোধ করে। তাই আপনি প্রতিদিন এই মজার ফলটি খেতে পারেন। বন্ধুরা আপনারা জানেন কি পেঁপেতে বিদ্যমান এনজাইম কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের মরা চামড়া দূর করে। নিজেকে রোগমুক্ত ও সুন্দর রাখার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে পাকা পেঁপে খান।

কলা:

সুস্বাদু ও পুষ্টিকর কলা সারা বছরই সহজেই পাওয়া যায়। এই জনপ্রিয় ফলটি সুষম খাদ্য তালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি পরিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি ও শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ১টি কলা খেলে হিমগ্লোবিনের ঘাটতি হবে না। এর ট্রিপটোফ্যান ঘুমের প্রাকৃতিক ওষুধ। যারা অনিদ্রা ও বিষন্নতায় ভুগছেন রাতের খাবারের শেষে ১-২টি কলা খাবেন। আর এই পর্যাপ্ত ঘুম আপনার মুখের ডার্ক সার্কেল ও চেহারার অবসন্নতা দূর করবে । কলার ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি ত্বক, চুল ও নখের জন্য খুবই উপকারী।

খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর অভাবে চুল পড়া, আগা ফাটাসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন বি, সি এবং পটাসিয়ামের অন্যতম উৎস কলা। এসব উপাদান ত্বক করে উজ্জ্বল ও নরম।

তরমুজ:

প্রচন্ড গরমে লাল টুকটুকে তরমুজ খেতে যেমন সবারই ভাল লাগে। এক ফালি তরমুজ আপনাকে দেবে ঠান্ডা ও শীতল অনুভূতি। কেবল প্রশান্তি-ই নয়, স্বাস্থ্যগত দিক দিক থেকেও তরমুজের গুণাবলী অনেক। কিডনি ও হৃদপিন্ড সুস্থ রাখতে, হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও তরমুজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রূপচর্চায়ও তরমুজের উপকারিতা পাওয়া যায়। এটি ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক ও চুলে শক্তি সঞ্চারিত করে। লাইকোপেন ও বিটা ক্যারোটিন ত্বককে রোদে পোড়া থাকে রক্ষা করে। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভিটামিন এ; যা ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এক চামচ তরমুজের রস ও টক দই মিশিয়ে ত্বকে ১০ মিনিট লাগিয়ে পর ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ও মলিন ত্বকে দারুণ কাজ করে এটি। 

আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার চেহারায় যে বয়সের ছাপ পড়ে তা তরমুজ খেলে দূর হয়। এতে থাকা ক্যালোরি আপনার বয়সের ছাপের দূর করে। অতএব, আপনার খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন তরমুজ রেখে অযাচিত বলিরেখা ও ত্বক কুঁচকে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পান। 

ডালিম:

বন্ধুরা আপনারা জানেন আপনার সুস্থ শরীরের জন‌্য ডালিম খুবই উপকারি একটি ফল। ডালিম রক্তশূন‌্যতা দূর করে শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায‌্য করে। আর এই ডালিমই আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায‌্য করবে। ডালিমে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায‌্য করে। নিয়মিত ডালিম খেলে কেবলমাত্র রক্তশূন্যতাই দূর হবে না, আপনার ত্বকও উজ্জ্বল হবে।

স্ট্রবেরি:

স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ। এটি ত্বকের মৃত কোষ উঠিয়ে ত্বক পরিষ্কার রাখে। এছাড়াও এটি ত্বকের বলিরেখা দূর করে। আপনার চুলের ঝলমলে ভাব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে স্ট্রবেরি। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ম্যালিক অ্যাসিড ত্বক করে উজ্জ্বল ও মসৃণ।  

কাঁঠাল:

কাঁঠাল আমাদের দেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। কাঁঠালকে শক্তি উৎপাদিত ফল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর ফাইবার শক্তি বাড়িয়ে পরিপাকে সহায়তা করে দূষিত পদার্থ অপসারণ করে ত্বককে রাখে সুস্থ। এতে থাকা ভিটামিন ‘সি ‘ ত্বকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে ত্বককে রক্ষা করে। তাই তো বলি কাঁঠাল শুধু ফলের রাজাই নয়, পুষ্টির রাজাও। এজন‌্য আপনারা সবাই নিয়মিত কাঁঠাল খান।

লিচু:

সুস্বাদু ও মজার লিচু কে না পছন্দ করে। শুধু আমাদের দেশেই নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশে ডেজার্ট হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বেশি। এটা শুধু মজার ফলই নয়। এই ফল আপনার ত্বকের জন‌্যও উপকারী। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বকের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কমে যায়, ফলে দেখা দেয় বলিরেখা। লিচুতে অলিগোনোল নামক এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে অনেক পরিমাণে। যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রাখে সুরক্ষিত। সে কারণে লিচুকে ত্বকের ক্যানসার ও বলিরেখার অস্ত্র বলা হয়। ব্যায়ামের পর লিচু খেলে অবসাদ যায় চলে। লিচুতে ভিটামিন ডি ও খনিজ পদার্থ থাকে বলে চুলের জন্যও ভলো ঔষধ।

পেয়ারা:

পেয়ারা একটি মৌসুমি ফল। কম বেশি সবার বাড়িতেই পেয়ারা গাছ রয়েছে। এ ফিলটি স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। বলা হয়ে থাকে চারটি আপেলে যে পুষ্টিগুন থাকে সেই পরিমান পুষ্টিগুন একটি মাত্র পেয়ারা তেই পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম তাজা পেয়ারায় ২২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ থাকে, তাই একে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল বলা হয়। এই ফলটি শুধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বৃদ্ধি করেনা সেই সাথে ত্বকের সৌন্দর্যে এর ভূমিকা অপরিসীম। পেয়ারা রক্তে কোলেস্টেরল কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে পেয়ারাকে বেছে নিতে পারেন।

আঙুর:

আঙুর সবার পছন্দের একটি ফল। বিভিন্ন প্রকারের আঙুর রয়েছে। এই ফলটি খেতে যেমন মধুর তেমনি এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে আর সেই সাথে এটি ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে সাহায‌্য করে। এই ফলে রয়েছে ফ্যাইটোকেমিক্যাল এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যা ত্বকের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে ত্বকে সুন্দর করে তোলে।

বরই:

বরই আছে হরেক রকমের। কোনোটা মিষ্টি আবার কোনোটা টক। ওজন কমানো, রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ অনেক গুণাগুণ রয়েছে বরই-তে। এটি ফাইবার-এ ভরপুর বলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। স্বাস্থ‌্যের পাশাপাশি ত্বকের জন‌্যও এটি খুব উপকারী। বরইতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি নখ ও চুলের জন্য অনেক উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টি অ্যাক্সিডেন্ট ত্বকের কালো দাগ ও বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।

লেবু:

লেবুকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়। ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উৎস এই ফলটি। স্বাস্থ‌্যের পাশাপাশি এই ফল ত্বক, নখ ও চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায‌্য করে। নিয়মিত লেবু খেলে ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বক করে মসৃণ। লেবুর শরবত শুধু রিফ্রেশিং পানীয়ই নয়- উষ্ণ পানি ও লেবুর মিশ্রণ ওজন কমানোর জন্য আদর্শ টনিক। খাবারের পর ১ টুকরো লেবু খেলে মুখের ভিতরের জীবানুর সংক্রমণ হয় না। নিজেকে সুস্থ ও তারুণ্যকে ধরে রাখতে প্রতিদিন বেশি বেশি লেবু খান।

জাম:

মিষ্টি ও রঙিন এই ফলটি সবারই খুব প্রিয়। ত্বক, চুল ও নখের সুস্বাস্থ্যের জন্য এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অলিফেনল ও অ্যালথোসায়ানাইড এই দুই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কোলাজেন বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করায় জামকে ন্যাচারাল সানস্ক্রিন বলা হয়। তাই সুস্থ‌ স্বাস্থ‌্য ও সুন্দর ত্বকের জন‌্য নিয়মিত জাম খান।

আপেল:

আপেল খেতে কমবেশি সবাই পছন্দ করেন। কম দামের এই ফলটি যেমন স্বাস্থ‌্যের জন‌্য উপকারী তেমনি ত্বক ও চুলের জন‌্যও খুবই প্রয়োজনীয়। আপেলে থাকা ভিটামিন সি ত্বককে টানটান করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ অন্যান্য অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর সঙ্গে মিলে মুখের ব্রণ দূর করে থাকে। তাছাড়া চুল তাড়াতাড়ি বাড়তে এবং খুশকি কমাতেও সাহায্য করে আপেল।

বন্ধুরা, এসব ফল ছাড়াও আরো অনেক ফল রয়েছে, যেমন- টমেটো, চালতা, বাতাবিলেবু, বেল,ডাব, কামরাঙা,আমলকি, জলপাই ইত‌্যাদি। আপনার ত্বকের রঙ ফর্সা বা কালো যেমনই হোক না কেন আপনি যদি সঠিক ভাবে ত্বকের যত্ন নেন তাহলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে সুন্দর, উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়। পর্যাপ্ত যত্নের অভাব, পরিবেশ দূষণ, মানসিক দুশ্চিন্তা- এ সব কারণে ত্বকের লাবণ্যতা চলে যায়। আর এই সমস‌্যা থেকে মুক্তি পেতে বেশি বেশি করে ফল খান। এতে আপনার শরীর থাকবে রোগমুক্ত আর আপনার ত্বক সুস্থ, সুন্দর ও দীপ্তময়।

তো বন্ধুরা আজ পর্যন্ত। আমার এই পোস্টটি সময় নিয়ে পড়ার জন‌্য আপনাদের অনেক ধন‌্যবাদ।

সবাই ভালো, সুস্থ সুন্দর থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।

আরো পরুন-

Post a Comment

0 Comments