আসসালামু আলাইকুম,
বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহ্ র রহমতে সবাই ভালো আছেন।
নিম গাছ সবারই একটি অতি পরিচিত গাছ।নিম গাছের
ছাল, নিমের ডাল ও নিম পাতা মানুষের জন্য কতটা উপকারী তা নিশ্চই আপনাদের সবার
জানা।
বন্ধুরা, আজকে আমার এই পোস্টটি সাজানো হয়েছে
চুলের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে নিমপাতা কিভাবে মহৌষধের মত কাজ করে আপনার চুলের সমস্যা
চিরতরে দূর করে দেবে। বিশেষ করে ভিজা চুল বেঁধে রাখলে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত
যে ছোট ছোট উকুনের ডিমের মত হালকা সাদা দেখতে গোটার সৃষ্টি হয়, যেটাকে আঞ্চলিক
ভাষায় আমরা পানি গিট বলে থাকি। এই সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। আজ আমি আপনাদের নিমপাতার
সাহায্যে এই সমস্যা কিভাবে দূর করবেন তার উপায় বলব।
চুল আমাদের সবারই খুব প্রিয় এবং পছন্দের। আর
প্রিয় এই চুলকে ভালো, সুস্থ, সুন্দর, ঝলমলে, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত আমরা কত কিছুইনা
করি। অরেক সময় সফল হই আবার কোনো কোনো সময় চুলের ক্ষতি ছাড়া কোনো কাজই হয়না। অনেক
সময় তো কৃত্রিম পণ্য ব্যবহারে এতে থাকা ক্ষতিকর ক্যামিকেলের প্রভাবে আমাদের
সুন্দর চুল হয়ে যায় রোগা, অনুজ্জ্বল ও অসুন্দর। এই কৃত্রিম পণ্য ব্যবহার না করে
আমরা যদি প্রাকৃতিক জিনিষগুলো আমাদের কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমরা অনেক ভালোও থকবো
আবার অনেক উপকারও পাবো। কারণ এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
বন্ধুরা, চলুন আর সময় নষ্ট না করে মূল আলোচনায়
যাই।
প্রথমে আমার নিজের অভিজ্ঞতা আমি আপনাদের কাছে শেয়ার করব।
বন্ধুরা, আমার বয়স যখন ১৩-১৪ বছর হাই স্কুলে পড়ি
তখন সকালবেলা স্কুলে গোছল করে যেতাম এবং ভিজা চুল গোড়া থেকে রাবার ব্যান্ড দিয়ে
বেঁধে নিতাম। এভাবে সারাদিন ই চুল বাঁধা থাকত। যার ফলে ২-৩ মাস পর আমার চুলের গোড়া
থেকে ডগা পর্যন্ত উকুনের ডিমের মত হালকা সাদা দেখতে গোটার সৃষ্টি হয়। এই ছোটো ছোটো
গোটার জন্য চুল হালকা সাদা দেখাতে লাগল। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এই সমস্যা
দূর করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক প্রণালী ব্যবহার করেছি কিন্তু কোনো কাজ
হচ্ছিল না বরং এগুলো আরো বাড়তে লাগলো। শেষ
পর্যন্ত নিম পাতা মহৌষধের মত কাজ করল,একেবারে ম্যাজিকের মত, আমি নিজেই অবাক হয়ে
গেছি। শুধুমাত্র একবার চুলে ব্যবহার করেছি এখন আমার বয়স ২৮ বছর আজ পর্যন্ত
আমার চুলে এরকম কোনো গোটাই হয়নি। এটা আমার জীবনের বাস্তব ঘটনা। আপনারা চাইলে ব্যবহার
করে দেখতে পারেন। ১০০% উপকার পাবেন
ইনশাআল্লাহ॥
আরো পরুনঃ
- চুলের গোড়া শক্ত-মজবুত, চুল পড়া বন্ধ এবং চুল ঘন-কালো-লম্বা করতে মেহেদি পাতা ব্যবহার করার নিয়ম।
- ওজন কমাতে ইসুবগুলের ভুসির উপকারিতা এবং খাওয়ার সঠিক নিয়ম।
- ত্বকের দাঁগ ও মুখের ত্বকের কালচে ছোপ দূর করে ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, লাবণ্যময় করে তুলুন ঘরোয়া উপায়ে।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারবিধিঃ
->
প্রথমে কিছু টাটকা নিমপাতা
নিন। অবশ্যই মাত্র গাছ পাড়া ও টাটকা হতে হবে, ফ্রিজে রাখা যাবেনা। পরিমানটা আপনার
চুলের পরিমান অনুযায়ী নিবেন।
->
এরপর পাতাগুলো
ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে / পাটায় বেঁটে পেস্ট বানিয়ে নিবেন। একেবারে ঘন বা পাতলা
করা যাবেনা।
->
বিকেলে / সন্ধ্যায় এই
পেস্টটি তৈরি করবেন। কারণ এটা সারারাত চুলে মাখিয়ে রাখতে হবে।
->
এবার এই নিমপাতার পেস্ট
মাথার চামড়ায় এবং চুলের গোড়ায় বিলি কেটে লাগিয়ে দিন। চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত
ভালো করে লাগাবেন। কোথাও যেন বাদ না থাকে।
->
এভাবে সারারাত রেখে
দিবেন। ঘুমানোর সময় মাথায় কোনো পাতলা কাপড় / ওড়না পেছিয়ে নিবেন। একটি পরামর্শ -
নিমপাতার এই পেস্ট শীতকালে ব্যবহার করবেন না। কারণ এই পেস্ট কিছুটা ঠান্ডা,
শীতকালে ব্যবহার করলে ঠান্ডা লাগতে পারে।
->
সকালবেলা নিমের পেস্ট মাথায়
থাকা অবস্থায় চিড়ুনি দিয়ে চুল আস্তে আস্তে খুব ভালো করে আছড়িয়ে নিবেন এবং তারপরে
মাথায় ও চুলে শ্যাম্পু করে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
দেখবেন ম্যাজিকের মত কাজ হয়েছে। আপনি নিজেই
অবাক হয়ে যাবেন এবং আপনার চোখকে বিশ্বাস করতে পারবেন না। আর আপনার চুলের সেই ছোট
ছোট গোটাগুলো আর কোনো দিনই দেখবেন না। চিরতরে চলে যাবে। একবার ব্যবহার করে দেখুন উকুনের
ডিমের মত হালকা সাদা দেখতে গোটা দূর করতে এই নিমপাতার পেস্ট কতটা কার্যকরী।
আরো পরুনঃ
- চুলের ডগা ফাঁটা রোধ এবং চুলের নানাবিধ সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পান আমলকির সাহায্যে।
- দ্রুত ওজন কমাতে চান? তাহলে নিয়ম করে এই খাবারগুলো খান। যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও
চুলের দ্রুত বৃদ্ধি, চুলপড়া বন্ধ,খুশকি ও উকুন তাড়াতে এবং ঝলমলে-প্রানবন্ত চুল
পেতে নিমপাতার কার্যকারীতাঃ
চুল দ্রুত বৃদ্ধিতে নিম পাতাঃ
বন্ধুরা আমাদের অনেকের চুলের বৃদ্ধির হার স্বাভাবিকের চাইতে অনেকটা কম গতি সম্পন্ন হয়ে থাকে। চুলের অন্য কোন সমস্যা না থাকলেও, চুল সহজে বৃদ্ধি পায় না। সেক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি চুলের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারের ভূমিকা অনেকটাই। এক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহার আপনাকে অনন্য উপকারিতা এনে দেবে।
এর জন্য আধা কাপ নারিকেল তেল, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, এক চা চামচ মেথি, এবং ১৫-২০টি নিম পাতা একসাথে জ্বাল দিয়ে ছেঁকে নিন। এবার এই ঘরোয়া উপায়ে তৈরি তেল রাতে সমস্ত চুলে ভালো করে লাগান এবং পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দুই বার এই তেল ব্যবহারে ২-৩ মাসের মধ্যে আপনি আপনার চুলে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
পরিমাণমত নিমপাতা, আমলকী, অ্যালোভেরা, ও শিকাকাই দিয়ে একটি হেয়ার প্যাক বানাতে হবে। সামান্য কর্পূরের গুঁড়া মিশাতে পারেন। এই প্যাক মাথায় আধা ঘন্টা রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করবেন দেখবেন ১-২ মাসের মধ্যে আপনার মাথায় নতুন চুল গজাবে এবং চুল পড়া সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
খুশকি তাড়াতে নিম পাতাঃ
চুল নষ্ট হওয়া এবং অতিরিক্ত চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল খুশকি। আর এই খুশকি তাড়াতে আমরা কত কত চেষ্টাই না করি। এই সমস্যা দ্রুত তাড়াতে পারলে চুলের বেশিরভাগ সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব হবে। নিম পাতায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল মাথার ত্বকের জন্য খুব উপকারী।
এর জন্য নিম পাতা বেঁটে তার সাথে সমপরিমাণ টকদই মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মাথার ত্বকসহ চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ৩০মিনিট রেখে এরপর ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে একবার এই হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন দেখবেন উপকার পাওয়া যাবে।
উকুন তাড়াতে নিম পাতাঃ
উকুনের সমস্যাটি যতটা বিরক্তিকর, ঠিক ততটাই বিব্রতকরও বটে। কমবেশি সব মেয়েদের মাথায়ই উকুন আছে। মাথার ত্বকের থেকে রক্ত শোষণ করে উকুন বেঁচে থাকে বলে মাথার ত্বকে ঘায়ের মত সমস্যা দেখা দেয়। সেই সাথে প্রবলভাবে চুলকানির সমস্যা তো রয়েছেই। উকুননাশক শ্যাম্পু ব্যবহারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপকার পাওয়া যায় না এবং পুনরায় উকুন ফিরে আসে। এমন সমস্যায় নিম পাতার ব্যবহার দারুণ কাজে আসবে।
উকুনের সমস্যা দূর করতে ১/২ কাপ নারিকেল তেলে ১৫-২০টি নিম পাতা জ্বাল দিয়ে নিমের তেল তৈরি করুন। রাতে ঘুমানোর আগে এই নিমের তেল মাথার ত্বকে ও চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন এবং পরদিন সকালে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। প্রতি ২-৩ দিন পরপর এই নিয়মে নিমে তেলের ব্যবহারে উকুন পুরোপুরিভাবে দূর হয়ে যাবে।
রুক্ষ চুল প্রাণবন্ত করে
তুলতে নিমপাতাঃ
পরিমাণমত নিমপাতা ও সমপরিমান মেহেদি গুঁড়ার সাথে অর্ধেক অনুপাতে চা ও কফি নিন, তার সঙ্গে সামান্য দই ও লেবুর রস দিয়ে একেটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক মাথায় দিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন। এতে চুল হবে ঝলমলে-প্রানবন্ত ও রেশমি কোমল, দূর হবে চুলের রুক্ষভাব।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে নিমপাতাঃ
নিমপাতা ও মধুর মিশ্রন চুলে কন্ডিশনারের কাজ করে থাকে। ২ টেবিল চামচ নিমপাতার গুঁড়া, একটি ডিম ও ২ টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন করে ব্যবহার করুন। এতে আপনার চুল হবে মোলায়েম ও ঝকঝকে। সেই সঙ্গে চুলের গোড়াও হবে মজবুত।
বন্ধুরা, আজ আর নয়। আমার এই সম্পূর্ণ লেখাটি মনযোগ
সহকারে পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার আরো নানা বিষয় নিয়ে সুন্দর সুন্দর লেখা
পড়তে এবং জানতে নিয়মিত আমার Juifull Bangla সাইটে ভিজিট করুন। সবাইকে ধন্যবাদ।
আপনারা সবাই ভালো, সুস্থ ও সুন্দর থাকবেন।
আল্লাহ্ হাফেজ।
0 Comments